• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Health Tips

Bangla Health Tips, News and Information (বাংলা হেলথ টিপস)

  • স্বাস্থ্য সংবাদ
  • লাইফস্টাইল
  • শরীরচর্চা
  • ১৮+

স্বাস্থ্য কথা

লাইফস্টাইল

শরীরচর্চা

১৮+

এইডসঃ অজ্ঞানতা ঠেলে দিচ্ছে নতুন ঝুঁকিতে

December 6, 2007

সোনাপুর গ্রামের মেয়ে সুখী। বাবা মেয়েকে বিয়ে দেন এক প্রবাসী ছেলের সঙ্গে। সুখীর বাবা ভাবতেন বিদেশি জামাই, সংসারে টাকা-পয়সার অভাব হবে না। মেয়ে বেশ সুখেই থাকবে। ভালোভাবেই বিয়ের আয়োজন শেষ হলো। নতুন সংসারে খুশি সুখীও। ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় বিয়ের দুই মাসের মধ্যে বিজয় তার কর্মক্ষেত্রে ফিরে গেল। বিদেশে আসার পর বিজয় খুব একাকিত্বে ভুগতে শুরু করে। স্ত্রী সুখীর জন্য একটা ভালো লাগা দায়িত্ববোধ তার মধ্যে সব সময় কাজ করে। কিন্তু এরই মধ্যে কিছুদিন অসুস্হতা বোধ করতে শুরু করে বিজয়। প্রায়ই তার জ্বর হচ্ছে, নিয়মিতভাবে কাশি দেখা দিয়েছে। বিজয় ডাক্তার দেখাচ্ছে কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। নিয়মিত অফিস কামাই দেয়ায় এক সময় কোম্পানি তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশে ফিরে বিজয় আরো অসুস্হ হতে শুরু করে। স্ত্রী সুখী চিকিৎসার জন্য তাকে শহরের বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও ডাক্তার যখন রোগ নির্ণয় করতে পারলেন না তখন তিনি বিজয়ের সঙ্গে কথা বলে তার বিবাহ-পুর্ব অনিয়ন্ত্রিত যৌন জীবন রক্ত পরীক্ষা করতে দেন এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তার নিশ্চিত হন, বিজয় এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এবং তা এইডসে পরিণত হয়েছে। ডাক্তারের কাছেই সুখী জানতে পারে তার স্বামীর অসুস্হতার কথা। পরিণতি যে নিশ্চিত মৃত্যু সে খবর শুনে সুখীর পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যায়। অসুস্হ স্বামীকে নিয়ে সে গ্রামে ফিরে আসে। এক কান দু’কান করে এ কথা সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের লোকেরা বিজয়দের বাড়ি আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সুখী তার গর্ভস্হ সন্তানের কথা ভেবে তার জমানো সব অর্থ, প্রচেষ্টা এবং ভালোবাসা দিয়ে স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। স্বামীর মৃত্যুর পরই শুরু হয় সুখীর জীবনের অন্ধকার অধ্যায়। প্রথম আঘাতটাই আসে শ্বশুরবাড়ি থেকে। বিজয়ের বাবা-মা সুখীকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। তারা বলে, ‘তোমার জন্য আমার ছেলে মরেছে। এখন আমরাও মরব।’ এলাকার ধর্মীয় নেতারা ফতোয়া দেন, এই নারী গ্রামে থাকলে গ্রামের ওপর শয়তানের আসর পড়বে। গ্রামের সকল মানুষ মরে যাবে। এর নিঃশ্বাস যার গায়ে পড়বে সেই মারা যাবে। সুতরাং তাকে গ্রাম থেকে বের করে দিতে হবে। গর্ভবতী অসহায় সুখী সবার হাত-পা ধরে স্বামীর ভিটায় একটু আশ্রয় ভিক্ষা করে। কিন্তু সে না পায় তার পরিবারের সহায়তা, না পায় সমাজের।

সুখীর মতো অনেক নিষ্পাপ নিরপরাধ নারীর জীবনে এইচআইভি/এইডস নিয়ে এসেছে এক অনিশ্চিত জীবনের বার্তা। সেই সঙ্গে অসহায়ত্ব আর ঝুঁকিপুর্ণ জীবনের ঝান্ডা নিয়ে পৃথিবীতে আসছে নতুন অতিথি।

আমরা প্রত্যেকেই বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। নিছক দিন যাপনের জন্য প্রাণ ধারণ করতে চাই না। চাই নিরোগ সুস্হ-সবল দেহ, শঙ্কাহীন মন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহানুভুতি এবং সুন্দর ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। কিন্তু ঘাতক ব্যাধি এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সুন্দর ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারকে সীমিত করে দেয়। অজ্ঞানতা ও তথ্যের অভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পরিবার ও সমাজের কাছে সে হয়ে ওঠে অস্পৃশ্য। অজ্ঞতা, অসচেতনতা এবং মুল্যবোধহীন অনিয়ন্ত্রিত জীবনব্যবস্হাই মরণব্যাধি এইডসকে আমন্ত্রণ জানায়।

বর্তমানে এইডস মহামারী আকারে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। রোগটি প্রথম ধরা পড়ে ১৮৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এইচআইভি নামক এক বিশেষ ধরনের ভাইরাস এইডসের কারণ, যা মানবদেহের কয়েকটি তরল পদার্থে (রক্ত, বীর্য, বুকের দুধ ইত্যাদি) বেশি থাকে। ফলে মানবদেহের এসব তরল পদার্থের আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে। বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী পুরুষের চেয়ে নারী এবং শিশুরাই এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হয় বেশি। ইউএনএইডসের তথ্য অনুসারে ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ সমগ্র বিশ্বে এইচআইভি সংক্রমিত মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৫০% ছিল নারী। আফ্রিকার মহাদেশের সাব-সাহারান দেশগুলোতে এর হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশের বেশি। বর্তমানে বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ১১ হাজার নারী ও পুরুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তারও প্রায় অর্ধেকই হলো নারী। বাংলাদেশেও নারীর অবস্হান অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে পুরুষের তুলনায় এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে নারী ঝুঁকিপুর্ণ হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো প্রধানত দায়ীঃ

* দেশে বিরাজমান আর্থসামাজিক কাঠামোতে নারীর দুর্বল অবস্হান
* প্রজনন স্বাস্হ্য শিক্ষার অভাব
* অল্প বয়সে বিয়ে
* পুরুষের আধিপত্য
* নারী পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীদের গৌণ ভুমিকা
* অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্হাপনে নারীদের বাধাদানের ক্ষমতার অভাব
* যৌন কৌতুহল ও অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক
* নারী ও শিশু পাচার ইত্যাদি।

আমাদের দেশে আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও পুরুষের তুলনায় নারীদের অবস্হান অত্যন্ত নাজুক। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এইচআইভি/এইডসের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন নারী আমাদের সমাজে নানা রকম পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি অপবাদ ও বৈষম্যমুলক আচরণের শিকার। এইচআইভি/এইডসে ঝুঁকিপুর্ণ নারীর অবস্হান প্রসঙ্গে এইচআইভি/এইডস প্রিভেনশন প্রজেক্টের প্রধান বাস্তবায়নকারী সংস্হা রুরাল পুওর ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (আরপিডিও) নির্বাহী পরিচালক রওশন আরা লিলি। ২০০৪ সাল থেকে মুলত এইডসের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপুর্ণ অবস্হান থাকা নারীদের নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে নারীরা অনেক বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর প্রধান কারণ পুরুষদের তুলনায় সামাজিক অধিকারের বিষয়ে নারীদের অবস্হান অনেক বেশি দুর্বল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও এখনো অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌনকর্মীরা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণে ক্লায়েন্টের অনিচ্ছাকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে বাল্যবিবাহ, যৌনরোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা, সচেতনতার অভাব, এ জাতীয় অসুস্হতায় চিকিৎসা সেবার অপ্রাপ্তি ও অপ্রতুলতার প্রধান শিকার হয় নারীরা।

রওশন আরা মনে করেন, এক মহামারী প্রতিরোধে ঝুঁকিপুর্ণ অবস্হানে থাকা নারীদের সংঘবদ্ধ ও সচেতন করে তোলা প্রয়োজন। আক্রান্তদের পুনর্বাসন, সাইকোলজিক্যাল কাউসিলিংয়ের পাশাপাশি তাদের প্রতি সামাজিক সহযোগিতা সৃষ্টির বিষয়ে জোর দেন তিনি। তিনি বলেন, এইডসকে প্রতিরোধ করতে হলে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। নারী, শিশুকে এ মহামারী থেকে বাঁচাতে তাই ব্যাপক প্রচারণা, সঠিক তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এইডস নারীর জন্য শুধু স্বাস্হ্য সমস্যা নয়, এটি তার জীবনে নানা দুর্বল অবস্হানের সঙ্গে যোগ হওয়া এক সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। যা শুধু একদিনের আয়োজন, দিবস পালন সীমাবদ্ধ রেখে প্রতিহত করা যাবে না। যে দেশের বিবাহিত মহিলাদের ৪০ শতাংশ এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে কিছু জানে না এবং যে সমাজে উচ্চ ঝুঁকিপুর্ণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ হলো নারী, সেই দেশের নারী সমাজকে এই মহামারী থেকে রক্ষা করতে হলে নিশ্চিত করতে হবে ব্যাপক গণসচেতনতা এবং নারীবান্ধব প্রজনন ও যৌন স্বাস্হ্যসেবা, প্রতিষ্ঠা করতে হবে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং বন্ধ করতে হবে নারীর প্রতি সহিংসতা।

লেখকঃ মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম
উৎসঃ দৈনিক আমারদেশ, ২০০৭/১২/০৬

Previous Post: « ডায়াবেটিসে চোখের সমস্যা
Next Post: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা কেন জরুরি »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Bangla Health – Bangla Library – Bangla PDF

Return to top