• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Health Tips

Bangla Health Tips, News and Information (বাংলা হেলথ টিপস)

  • স্বাস্থ্য সংবাদ
  • লাইফস্টাইল
  • শরীরচর্চা
  • ১৮+

স্বাস্থ্য কথা

লাইফস্টাইল

শরীরচর্চা

১৮+

ওজন অহেতুক কমাচ্ছেন না তো!

December 2, 2008

বছর দুয়েক আগে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক তরুণী মডেলের মৃত্যু আলোড়ন তুলেছিল পুরো শোবিজ-জগতে। শুধু শোবিজ জগৎই নয়, বি্নিত হয়েছিল সব সচেতন মানুষই। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল আধুনিক কালের ‘আকর্ষণীয় সৌন্দর্য’-এর সংজ্ঞা। মডেলিং জগতে চালু করতে হয়েছিল নতুন নিয়মও। ২১ বছর বয়সী ওই ব্রাজিলিয়ান তরুণীর নাম আনা ক্যারোলিনা রেস্টন। কিডনি অকেজো হয়ে প্রায় ২০ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর মারা যান তিনি।

পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি উচ্চতার ওই তরুণীর ওজন ছিল মাত্র ৪০ কেজি এবং তিনি স্বেচ্ছায় ওজন কমিয়ে নিজেকে নিয়ে এসেছিলেন এ অবস্থায়। অতিরিক্ত শুকনো হওয়া সত্ত্বেও তাঁর বদ্ধমূল ধারণা ছিল, তিনি স্থূলকায় এবং এ জন্য লোকজনের কাছে অনাকর্ষণীয়, যা তাঁর মডেলিং ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাঁর মা জানান, মেয়ে ওজন আরও কমানোর জন্য খাওয়াদাওয়া প্রায় করতই না।
কিছু বলতে গেলে মেয়ে মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠত, ‘এ নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। আমি ঠিকই আছি।’ আনা ক্যারোলিনার এক বোন বলেন, ‘খুব কম পরিমাণ খেলেও সে কিছুক্ষণ পর বাথরুমে গিয়ে গোপনে বমি করে তা ফেলে দিত।’
ক্রমাগত না খেয়ে থাকার জন্য তাঁর শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। পরে বিভিন্ন দেশে মডেলদের ন্যূনতম আদর্শ ওজন রক্ষার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। আলোচ্য তরুণীটি ভুগছিলেন খাদ্যাভ্যাসের অস্বাভাবিকতাজনিত একটি মানসিক রোগ স্বল্পাহারজনিত কৃশতায় (অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা)।

রোগাক্রান্তের অধিকাংশই নারী
গবেষণায় দেখা গেছে, এ রোগে আক্রান্তের ৯০ শতাংশই নারী। তবে গবেষকেরা এও বলেছেন, এতে আক্রান্তের প্রকৃত হার নির্ণয় করা কঠিন। কারণ, অনেকেই তাঁদের এ সমস্যাটি স্বীকার করতে চান না। যেকোনো বয়সেই এ রোগ দেখা দিতে পারে। তবে বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের মধ্যেই এটি বেশি দেখা যায়। শোবিজ-জগতে যেতে ইচ্ছুক অথবা অতিরিক্ত সৌন্দর্যসচেতন মেয়েদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি। মেয়েদের তুলনায় কম হলেও ছেলেরাও এ রোগে আক্রান্ত হয়।

ওজন কমিয়ে রাখাই হয় মূল লক্ষ্য
স্বল্পাহারজনিত কৃশতায় আক্রান্ত রোগীরা ন্যূনতম স্বাভাবিক ওজনও বজায় রাখে না। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ যে ওজন হওয়া উচিত, তার ৮৫ শতাংশেরও কম হয় এদের ওজন। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী যার ন্যূনতম ৬০ কেজি ওজন হওয়া উচিত, তার ওজন হয় ৫১ কেজিরও কম।
আদর্শ স্থূলত্ব মাপার একটি একক হচ্ছে বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স)। উচ্চতা আর ওজনের আনুপাতিক হিসাব করে বের করা হয় বিএমআই। ২০-২৫ হচ্ছে স্বাভাবিক বিএমআই। আর এই রোগীদের বিএমআই হয় ১৭ দশমিক ৫-এর নিচে। রোগীরা স্বেচ্ছায় ওজন কমায়। নানা অজুহাতে খাবার এড়িয়ে চলে। ওজন কমানোর জন্য তারা শুধু যে কম খায় তা নয়, অনেকে খাওয়ার পরপর গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে বমি করে খাবার ফেলেও দেয়। অতিরিক্ত ব্যায়াম করা ছাড়াও অনেকে এমন সব ওষুধ খায়, যা অতিরিক্ত মলমূত্র তৈরি করে শরীর থেকে খাবার ও পানি বের করে দেয় অথবা খাদ্য গ্রহণে অরুচি সৃষ্টি করে।

নিজের দেহের আকৃতি ও ওজন সম্পর্কে এসব রোগীর প্রবল ভুল ধারণা তৈরি হয়। খুবই চিকন হওয়ার পর এরা নিজেদের মোটা বলেই মনে করে। আশপাশের লোকজন বুঝতে পারে, আগের চেয়ে অনেকখানি ওজন কমে গেছে। কিন্তু রোগীরা সেটা মানতে চায় না। তাদের লক্ষ্য থাকে আরও ওজন কমানো। সব সময় তারা ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভীত থাকে। ওজন নিয়ন্ত্রণের ওপরই যেন তাদের জীবনের সবটুকু সার্থকতা।

অনাহারজনিত জটিলতা অনেক
স্বল্পাহারজনিত কৃশতায় রোগীদের নানা জটিলতা দেখা দেয়। শরীরের রাসায়নিকের সাম্যাবস্থা বিনষ্ট হয়। পটাশিয়াম কমে যায়, অন্যান্য ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণেও তারতম্য ঘটে, হরমোনের অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, খাদ্যনালির গন্ডগোল, কোষ্ঠকাঠিন্য, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন, খিঁচুনি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। রক্তচাপ কমে যায়। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে।

শরীরের নানা জায়গায় নতুন রোম গজায়। ঠান্ডা সহ্য হয় না। হাত-পা-মুখ পানি জমে ফুলে যায়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি কমে গিয়ে হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। দীর্ঘ মেয়াদে এসব চলতে থাকলে কিডনি অকেজো হয়ে যায়, হৃদরোগ দেখা দেয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে মৃত্যুও হতে পারে।

হরমোনের গন্ডগোলের কারণে মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। বয়ঃসন্ধিকালের আগে বা শুরুর দিকে এ রোগ হলে রোগীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। রোগী বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়। মেজাজ খিটখিটে হয়। নিজের ওপর আস্থা কমে যায়। যৌনতায় আগ্রহ কমে যায়। আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। অনেকে ভোগে খুঁতখুঁতে স্বভাবজনিত রোগ অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিজঅর্ডারে। অনেকে মাদকাসক্তও হয়ে পড়ে। এ রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে।

চিকিৎসায় উদ্ধুদ্ধ করতে হবে
এসব রোগী তাদের রোগের ব্যাপারটি মানতে চায় না বলে চিকিৎসা নিতেও খুব একটা আগ্রহী হয় না। যাদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর, ওজন বিপজ্জনক মাত্রায় কমার হার খুব দ্রুত অথবা যাদের মারাত্মক বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই হাসপাতালে ভর্তি করানো প্রয়োজন হতে পারে (তবে অবশ্যই তা মানসিক স্বাস্থ্য আইনের আওতায় থেকে)। আর রোগী নিজ থেকেই চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক হলে বা তাকে প্রথমেই চিকিৎসায় উদ্বুদ্ধ করা গেলে হাসপাতালে ভর্তি না করিয়েও চিকিৎসা সম্ভব। চিকিৎসার প্রথম ধাপটি হচ্ছে রোগীকে সঠিক ওজনে ফিরিয়ে আনা।

এ জন্য খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। খাওয়ানো সম্ভব না হলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া হয়। শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হলে তার চিকিৎসা করা হয়। শরীরে ইলেকট্রোলাইট, ভিটামিন প্রভৃতির ঘাটতি পূরণের পর ধাপে ধাপে রোগীর ওজন বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।
সাধারণত প্রতি সপ্তাহে শূন্য দশমিক পাঁচ থেকে এক কেজি করে ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। এভাবে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহে ওজন মোটামুটি আদর্শ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগীর খাদ্য গ্রহণ সেবিকা বা দায়িত্বশীল কারও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে করা ভালো। তবে ওজন বাড়ানোর এ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার আগে রোগীকে চিকিৎসাব্যবস্থার পুরো ধাপটি ব্যাখ্যা করে রোগীর আস্থা অর্জন করে নিতে হয়। চিকিৎসকের ওপর রোগীর আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর চিকিৎসার সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাপোর্টিভ সাইকোথেরাপির মাধ্যমে রোগীকে সহানুভূতির সঙ্গে উৎসাহ দিয়ে তার আস্থা অর্জন করা যেতে পারে। এ ছাড়া ধারণা পরিবর্তনকারী চিকিৎসার (কগনিটিভ থেরাপি) মাধ্যমে দৈহিক আকৃতি, ওজন ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে রোগীর ভ্রান্ত ধারণা দূর করা হয়। রোগটি সম্পর্কে রোগীর পাশাপাশি তার পরিবারকেও সচেতন করা হয়। বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট-জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

এ রোগে মৃত্যুর উদাহরণ যেমন আছে, তেমনি একে পরাজিত করে স্বাভাবিক জীবন যাপনের কাহিনীও রয়েছে। ‘স্পাইস গার্লস’দের অন্যতম গ্যারি হলওয়েল, ভিক্টোরিয়া বেকহাম, অভিনেত্রী কেট উইন্সলেটসহ অনেক তারকাই এ রোগে ভুগেছেন এবং চিকিৎসা করে ভালোও হয়েছেন। মনে রাখবেন, স্বল্পাহারজনিত কৃশতা রোগের চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ। তাই এ রোগ থেকে মুক্ত হতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলতে হবে ধৈর্য ধরে।

ডা· মুনতাসীর মারুফ
চিকিৎসা কর্মকর্তা
কড়ইচূড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জামালপুর
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৩, ২০০৮

Previous Post: « লালাঃ রোগ নির্ণয়ের নতুন মাধ্যম
Next Post: যে কথা যায় না বলা – ক্ষমা করো নারী··· »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Bangla Health – Bangla Library – Bangla PDF

Return to top